পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শর্ট সেল সংক্রান্ত নীতিমালা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে। আইন অনুসারে, বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে শর্ট সেল করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মূলত নিম্নমুখী বাজারে স্পেকুলেটিভ ট্রেডিং থেকে মুনাফা করার জন্য শর্ট সেল ব্যবস্থা প্রচলন হয়। নিজের কাছে নেই—এমন সিকিউরিটিজ বেচে দেয়াই হলো শর্ট সেল। দরপতনের পূর্বানুমান থেকেই এটি করা হয়। দাম কমে গেলে এক সময় সেটি বাজার থেকে কিনে আসল মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বিক্রয়মূল্য থেকে ক্রয়মূল্য, ট্রেডিং কমিশন, মার্জিন ঋণের সুদ, লভ্যাংশ ও রাইট শেয়ার বাদ দিয়ে শর্ট সেলারের মুনাফা হিসাব করা হয়।
‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (শর্ট সেল) রুলস, ২০১৯’ শীর্ষক খসড়া আইনে বলা হয়েছে, শর্ট সেল করতে হলে শেয়ারের প্রকৃত মালিক বা লেন্ডারের সঙ্গে কয়েকটি শর্ত মেনে চুক্তি করবে শেয়ার ধারকারী। এ শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে।
শর্ট সেলের ফ্রেমওয়ার্ক:
শর্ট সেলের জন্য ধারকারী ও ধার প্রদানকারীর চুক্তিতে এসব শর্ত থাকতে হবে।
১। শেয়ার ধারের নির্দিষ্ট সময়সীমা।
২। ধারকারী ও ধার প্রদানকারীর জন্য চার্জ, ফি অথবা মুনাফা নির্ধারণ।
৩। ধারের বিপরীতে সমমূল্যের সিকিউরিটিজ (ক্যাশ, ডিপোজিট সার্টিফিকেট, ব্যাংক গ্যারান্টি, লিকুইড ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট, তালিকাভুক্ত শেয়ার ও এক্সচেঞ্জ সিসিপি অনুমোদিত ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট) রাখা,
৪। রিটার্নের জন্য সঞ্চিতি ও যে কোনো প্রকার বিতর্ক সালিশির মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ।
৫। শর্ট সেলে লোকসান হলে এর ভার ধারকারীকে বহন করতে হবে।
শর্ট সেলের ম্যাকানিজম:
১। চুক্তি অনুযায়ী মুনাফাসহ সিকিউরিটিজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। আর এ চুক্তির নিশ্চয়তা দেবে স্টক ব্রোকার ও ডিলার। এর জন্য তারা যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে।
২। শর্ট সেল শুধু স্টক ব্রোকার ও ডিলাররা করতে পারবে। এর মধ্যে স্টক ডিলার নিজস্ব হিসাবে আর ব্রোকার গ্রাহকের হিসাবে শর্ট সেল করতে পারবে।
৩। এক্ষেত্রে শর্ট সেলের সব দায়িত্ব স্টক ব্রোকার ও ডিলার পালন করবে। ধারকারী বা বরোয়ার দায় শোধ না করা পর্যন্ত শর্ট সেলের লেনদেন থেকে অব্যাহতি পাবে না।
৪। আর ধারকারী বা বরোয়ার চুক্তি অনুযায়ী দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে এর দায়িত্ব স্টক ব্রোকারকে নিতে হবে। এর জন্য ব্রোকার বা ডিলার ধারকারীর কাছ থেকে জামানত রেখে দেবে।
একীভুত হবে এমন শেয়ার শর্ট সেল নয়:
১। একীভূত অথবা অধিগ্রহণ হবে—এমন কোম্পানি শেয়ার এবং যোগ্য সিকিউরিটিজ নয়—এমন শেয়ার শর্ট সেল করা যাবে না।
২। স্টক এক্সচেঞ্জ বিএসইসির সম্মতি নিয়ে এ বিষয়ে যে কোনো শর্ত আরোপ করতে পারবে।
৩। আর স্টক ডিলার ও ব্রোকার এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ও সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির নির্দেশ মেনে কাজ করবে।
‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারই শর্ট সেল:
১। শুধু ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার শর্ট সেল করা যাবে। তবে কমিশনের সম্মতি নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ সরকারি শেয়ার ও অন্য কোনো ক্যাটাগরির শেয়ারও শর্ট সেলের জন্য বিবেচনা করতে পারবে।
২। দিন শেষে নিট শর্ট সেলের এই প্রতিবেদন প্রত্যেক স্টক ব্রোকার ও ডিলার মেনটেইন করবে। তবে মার্কেট মেকারের ক্ষেত্রে এগুলো প্রযোজ্য হবে না।
শর্ট সেলের তথ্য সংরক্ষণ:
১। শর্ট সেলের তথ্য রাখার জন্য কমিশন একটি ছক নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ তথ্য শর্ট সেল হওয়ার পর সা৭ বছর সংরক্ষণ করা হবে।
২। কমিশন বা এক্সচেঞ্জ চাওয়ামাত্র স্টক ডিলার ও ব্রোকার তথ্য দাখিল করতে বাধ্য থাকবে। তথ্যের নির্ভুলতার গ্যারান্টিও তারা দেবে। এ আইন ভঙ্গ করলে কমিশন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
পাঠকের মতামত: